জন্ম: ১৯৫৭ খ্রি:
১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি কামাল চৌধুরীর জন্ম কুমিল­া জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিজয়করা গ্রামে। পুরো নাম: কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বাবা আহমদ হোসেন চৌধুরী ও মা বেগম তাহেরা হোসেনের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক (এস. এস. সি) এবং ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচ.এস.সি) পাশ করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেন এবং ব্যাচেলরস ও মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন ছিল উন্মাতাল; এখানেই কাব্যল²ীর কাছে চিরসমর্পণ; এখানেই রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল­াহ, তসলিমা নাসরিন সহ সমসাময়িক কবিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা; এখানেই কবিতার সঙ্গে চিরকালের গাঁটছড়া; এখানেই নিজেকে কবিতা পথিক হিসেবে চিরচিহ্নিত করা। কবিতা লিখতে লিখতেই এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন সমাজবিজ্ঞানে। কিন্তু সেখানেই লেখাপড়ার গণ্ডী শেষ হয়ে যায়নি। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে সরকারি চাকুরীর অবসরেই নৃবিজ্ঞানে পিএইচ, ডি সম্পন্ন করেন। তাঁর পি এইচ, ডি অভিসন্দর্ভের বিষয়বস্তু ‘গারো জনগোষ্ঠীর মাতৃসূত্রীয় আবাস প্রথা’।
১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে কামাল চৌধুরী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য হিসেবে চাকুরী গ্রহণ করেন। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০১০ থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়ীত্ব পালন করেন। ২০১৪ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬-এর শেষ দিকে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন ২০১৩-২০১৭ মেয়াদের জন্য। অধিকন্তু তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়ীত্ব পালন করেন ২০১৩-২০১৫ মেয়াদের জন্য। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের কনভেনশনস অ্যান্ড রেকমেনডেশনস (সিআর) কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ইউনেস্কোর পাঁচটি সাবসিডিয়ারি কমিটি রয়েছে যার মধ্যে সিআর কমিটির একটি। এর সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বর্তমানে তিরিশ।
কামাল চৌধুরী প্রথম কাব্যগ্রন্থ মিছিলের সমান বয়সী প্রকাশিত হয় ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে। একে একে আরো আটটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যথা: এই পথ এই কোলাহল (১৯৯৩), এসেছি নিজের ভোরে (১৯৯৫), এই মেঘ বিদ্যুতে ভরা (১৯৯৭), ধূলি ও সাগর দৃশ্য (২০০০), রোদ বৃষ্টি অন্ত্যমিল (২০০৩), হে মাটি পৃথিবীপুত্র (২০০৬), প্রেমের কবিতা (২০০৮) এবং পান্থশালার ঘোড়া (২০১০)। ১৯৯৫-এ নির্বাচিত কবিতা । ২০১১ কবিতাসংকলন । ২০০৭-এ আপন মনের পাঠশালাতে।
রুদ্র পদক (২০০০), সৌহার্দ্য সম্মাননা (পশ্চিমবঙ্গ) (২০০৩), কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪), জীবনানন্দ পুরস্কার (২০০৮), সিটি- আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার (২০১০), দরিয়ানগর কবিতা সম্মাননা (২০১০), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (২০১২),
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে কর্মরত। তিনি একজন সুপরিচিত আধুনিক কবি। তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু প্রেম ও দ্রোহ; সমাজচেতনা তাঁর কাব্যপ্রেরণার অন্যতম সূত্র। তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য গীতিময়তা। তাঁর অন্যতম কাব্যগ্রন্থ টানাপোড়েনের দিন যাতে তিনি মুক্ত ছন্দে নতুন এক কাব্যভাষার অনুশীলন করেছেন। বাংলা কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে ২০১২ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রদান করা হয়।